|

ইমেইল লেখার নিয়ম ও মেসেঞ্জারে যোগাযোগের এটিকেট বা শিষ্টাচার

ব্যাপারটি নিয়ে অনেকদিন ধরে ভাবছি। লিখবো লিখবো করে লেখা হয়ে উঠছে না। কেন লিখব তার উত্তর আছে। কিন্তু কীভাবে শুরু করব সেটি ভেবে পাচ্ছিলাম না। ‌অবশেষে একটা উপলক্ষ পেলাম।

আমাদের দেশের ছেলেপেলেরা যোগাযোগে খুবই দুর্বল। এটি শুনে অনেকের মনটা হয়তো খারাপ হবে। কিন্তু আমি চেষ্টা করব আমার পার্সপেক্টিভ থেকে সহায়তা করতে। যাতে করে কমিউনিকেশন স্কিল উন্নত করতে পারা যায়।

এই লেখাটিতে কমিউনিকেশন স্কিল বলতে সুনির্দিষ্টভাবে অনলাইনে কিভাবে একজন প্রফেসর কিংবা টেকনিক্যাল পারসন এর সাথে যোগাযোগ করতে হয় সেটি বোঝাচ্ছি।

যদিও অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত কারো সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দিষ্ট কোন প্রটোকল নেই, তথাপি সাধারণ কিছু আদব কায়দা বা পদ্ধতি আছে যেগুলো অনুসরণ করলে যোগাযোগ সহজ হয়ে যায় এবং যে কারণে যোগাযোগ করা হচ্ছে সেটি সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইমেইল এখন যোগাযোগের প্রধানতম মাধ্যম। বিশেষ করে কর্পোরেট জগতে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কারও সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ইমেইল। ‌

ইদানিং ইমেইল এর পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়া মেসেজিং বলতে লিংকডইন এবং ফেইসবুক মেসেঞ্জার বোঝাচ্ছি। যারা টুইটারে অভ্যস্ত তাদের সাথে টুইটারে সরাসরি মেসেজে ও যোগাযোগ করা সম্ভব। ‌ সব ক্ষেত্রে একই নিয়ম ব্যবহার করা যাবে।

এবার মূল কথায় আসা যাক।

ইমেইলে যোগাযোগ

আমেরিকাতে ইউনিভার্সিটি কিংবা কলেজের শিক্ষকদেরকে প্রফেসর বলে। “প্রফেসর” তার ডেজিগনেশন হতে পারে অথবা নাও হতে পারে। অর্থাৎ উনি পদাধিকার বলে প্রফেসর হতে পারেন, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হতে পারেন বা এসোসিয়েট প্রফেসর হতে পারেন। কিন্তু উনারা সবাই প্রফেসর হিসেবে পরিচয় দেন এবং পরিচিত হতে পছন্দ করেন। অর্থাৎ ছাত্ররা তাদেরকে ” হ্যালো প্রফেসর অমুক” অথবা “হাই প্রফেসর তমুক” - এভাবেই সম্বোধন করে।

তাহলে ব্যাপারটা এরকম-

প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য এভাবে শুরু করতে পারেন

Dear Professor Cohen

যেখানে Cohen হল এই প্রফেসর এর লাস্ট নেম। ‌ তার নাম যদি হয়ে থাকে John Cohen, তাহলে তাকে এভাবেই অ্যাড্রেস করতে হবে।

বিজনেস কমিউনিকেশন এ অপরিচিত কাউকে সাধারনত Dear দিয়ে শুরু করা হয় না। কিন্তু অ্যাক্যাডেমিয়াতে ডিয়ার দিয়ে কথা শুরু করা যায়। আপনি এভাবেও বলতে পারেন– Dear Dr Cohen,

তার ডক্টরেট ডিগ্রী আছে কি নাই সেটি আপনাকে না চিন্তা করলেও হবে।

অ্যাক্যাডেমিয়া তে ডক্টরেট না থাকলেও অনেক সময় ডক্টর দিয়ে সেলুটেশন লেখা হয়। বিশেষ করে ছাত্রদেরকে।

এর পরে প্রথমেই বলতে হবে আপনি কে, সেটি। আপনি লিখতে পারেন

I am Abdul Karim from Bangladesh, writing to you about any opportunity to work in your research lab.

এখানে মূল ব্যাপারটি হল প্রথমে আপনাকে জানাতে হবে আপনি কে এবং কী বিষয় নিয়ে ইমেইলটি লিখছেন।

প্রফেসররা অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ। তাই তাদের কাছে অল্প কথায় মূল বক্তব্য পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে।

লক্ষ্য রাখতে হবে ইমেইল এর সাইজ যেন ছোট ছোট ৩-৪ টি প্যারাগ্রাফ এর বেশি না হয়। এর কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই তবে যত কম হয় তত ভালো। ৩ থেকে ৪ টি প্যারাগ্রাফ যথেষ্ট বলে আমি মনে করি।

এর পরে আপনি উল্লেখ করতে পারেন কেন এই প্রফেসরের সাথে কাজ করতে আগ্রহী হলেন। সেক্ষেত্রে তার রিসার্চ পাবলিকেশন কিংবা কাজের ধরনের কথা উল্লেখ করতে পারেন। এখানে শুধু আপনি যে তার বিশেষ ধরনের গবোষণায় আগ্রহী সেটি বললে যথেষ্ট হবে না। সাথে বলতে হবে কেন আগ্রহী হলেন সেটাও। সেটি হতে পারে রিলেটেড কোন কোর্স ওয়ার্ক আপনি করেছেন যেখান থেকে এই আগ্রহ জন্মেছে। অথবা হতে পারে সাম্প্রতিক কালে কোন ইনটারেস্টিং আর্টিকেল আপনি পড়েছেন এবং সে বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন এবং পরবর্তীতে গবেষণা করার আগ্রহ জন্মেছে এবং সে বিষয়ে গুগলে খুঁজতে গিয়ে প্রফেসরকে পেয়েছেন - সেটিও বলতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে যেন তিন থেকে চার লাইনের বেশি বা খুব বেশী লম্বা না হয়।

এর পরের প্যারাগ্রাফ-এ সংক্ষেপে আপনার একাডেমিক হাইলাইটস দেবেন। আপনি ব্যবচলরস বা মাস্টার্স শেষ করে থাকলে বা পড়াশোনা করছেন এরকম অবস্থায় থাকলে সেটি জানাবেন। যদি আপনার ডিগ্রী সম্পূর্ণ না হয়ে থাকে তাহলে কবে নাগাদ শেষ হবে সেটির নির্ভরযোগ্য একটি সময়কাল বলা ভাল। তবে আমার পরামর্শ হলো আপনি প্রফেসর এর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন সেই পর্যায়ে গিয়ে যখন আপনি নিশ্চিত যে আসছে সেমিস্টারে বা ভবিষ্যতের যে সেমিস্টারে এডমিশন ওপেন হবে সেই সেমিষ্টারে আপনি জয়েন করতে পারবেন এমন অবস্থায়। আপনার জিপিএ উল্লেখ করতে পারেন। সাথে গবেষণার কোন অভিজ্ঞতা থাকলে এমন কি কোন পাবলিকেশন্স থাকলে সেটি উল্লেখ করে দিতে পারেন।

এর পরে প্রফেসর কে ধন্যবাদ দিয়ে মেইল শেষ করবেন এভাবে

Thank you for your considerations. I look forward to hearing from you.

Sincerely, Your name Your city, your country Your website if you have.

এ তো গেল প্রফেসরের সাথে প্রথম যোগাযোগের ধাপ।

প্রফেসর যদি ই-মেইলের উত্তর দেয় তাহলে যেভাবে সেই উত্তরের উত্তর দিতে হবে সেটি বলে দিচ্ছি।

আপনি এভাবেই শুরু করতে পারেন –

Dear Professor Cohen, Thank you for your response.

এর পরে আপনি আর যা যা বলা দরকার সেগুলো খুবই সংক্ষেপে সুন্দর করে লিখবেন। ছোট ছোট প্যারা দিয়ে লিখবেন। বেশি কথা বলার না থাকলে এক প্যারাতেই শেষ করবেন। কিন্তু কোনোভাবেই এক প্যারায় যেন ৪-৫ লাইনের বেশি বাক্য না থাকে।

পরিশেষে ধন্যবাদ দিয়ে ইমেইল শেষ করবেন।

আর ইমেইল শেষ করার আগে আমি একটা টেকনিক সব সময় করি সেটি হল এমন কিছু একটা বলা যার ফলে প্রফেসর আমার প্রশ্ন বা মন্তব্য নিয়ে চিন্তা করবে এবং সেটির একটি উত্তর দেয়ার কথা ভাববে।

এই টেকনিকের মূল উদ্দেশ্য হলো তার সাথে কমিউনিকেশনের চেইনটি বজায় রাখা। এমনকি প্রফেসর যদি এই মুহূর্তে উত্তর নাও দেন তাহলে যেন আপনার একটা অজুহাত থাকে যেটি নিয়ে পরবর্তীতে তার সাথে আবার যোগাযোগ করতে পারেন। অর্থাৎ পরবর্তীতে যোগাযোগের সূত্রটি আপনি প্রফেসরের কোর্টে রেখে দিলেন। আর এই সূত্র ধরেই আপনি তার সঙ্গে আবারও ফলোআপ যোগাযোগ করতে পারবেন।

ব্যাপারটি এতটাই সিম্পল ☺

ইমেইলে যা যা যুক্ত করতে পারেন

  • সিভি এটাচ করতে পারেন তবে অবশ্যই পিডিএফ বা স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাটে
  • ব্যক্তিগত ওয়েব থাকলে দিবেন
  • লিংকডইন থাকলে অবশ্যই দিবেন

ইমেইলে যা যা যুক্ত করবেন না

  • Your majesty, Your kindness bla bla bla, Your obedient pupil - এসব না লিখতে পরামর্শ দিব। মূল লক্ষ্য থাকবে প্রফেশনাল মেইল লেখার। আপনি কোন জাজের কাছে মাফ চেয়ে আবেদন করছেন না
  • একগাদা পেপার এটাচ করবেন না
  • ট্র্যান্সক্রিপ্ট এটাচ না করাই ভাল, তবে এটা যদি আপনার ফিল্ডে কমন হয় তাহলে দেয়া যেতে পারে
  • কোন ডকুমেন্ট যেখানে আপনার জন্ম তারিখ, বাবা মায়ের নাম ঠিকানা, কিংবা আপনার উচ্চতা বা বংশ পরিচয় আছে সেগুলো ভুলেও দিবেন না
  • এডমিশন সংক্রান্ত এডমিনিস্ট্রেটিভ কিছু প্রফেসরকে জিজ্ঞেস করবেন না। যেমন, জিআরই স্কোর কত লাগবে, ভর্তির রিকোয়ারমেন্ট কি এসব জিজ্ঞস করলে প্রফেসর ভাববেন আপনি হোমওয়ার্ক না করেই তার সাথে যোগাযোগ করছেন

মেসেঞ্জারের মাধ্যমে যোগাযোগ

প্রথমত কোন প্রফেসরকে শুরুতেই ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করবেন না। এর কারণ হলো কোন প্রফেসরের যদি ফেসবুকে একাউন্ট থাকে তাহলে ধরে নিবেন সেটি তার একান্ত ব্যক্তিগত একটি পরিসর। সেখানে হুট করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো উচিত নয়। আপনি বরং খুঁজে দেখবেন তার লিংকডইন আছে কিনা। যদি লিংকডইনে তাকে পান তাহলে সেখানে কানেকশন রিকোয়েস্ট দিবেন।

তার আগে অবশ্যই নিজের প্রোফাইলটিকে সুন্দর করে সাজাবেন। আপনার প্রোফাইল যদি খালি হয় সেই প্রোফাইল নিয়ে কারো কাছে রিকোয়েস্ট পাঠাবেন না। যদি পাঠান সেটি আপনি যে সিরিয়াস নন সেটি মনে হতে পারে।

যাই হোক।

ধরুন আপনি ফেসবুকে তার সাথে যুক্ত আছেন। বা লিংকডইনে তার সাথে যুক্ত আছেন। কিভাবে তার সাথে কনভারসেশন শুরু করবেন সেটি আমি বলছি।

আপনাকে খুব সতর্কতার সাথে এগোতে হবে। ইমেইলে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করলে সেটি অনেকটা প্যাসিভ। অন্যদিকে লিংকডইন বা মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করলে সেটি ডিরেক্ট বলে অনুভূত হয়। এর কারণ হলো মেসেজটি ডেলিভার হয়েছে কিনা বা অপরপক্ষ মেসেজটি দেখেছে কিনা সেটি মেসেজ যিনি প্রেরণ করেছেন তিনি দেখতে পারেন। এর ফলে প্রাপকের দিক থেকে এক ধরনের মানসিক অবস্থার সৃষ্টি হয় এমনকি প্রেরকের দিক থেকেও মানসিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। কি বলতে চাচ্ছি আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

না বুঝলে বলছি।

প্রাপক মেসেজটা দেখার পরেও যতক্ষণ না উত্তর দিতে পারছে ততক্ষণ তার এক ধরনের মানসিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে যিনি প্রেরক তিনি দেখেছেন যে প্রাপক তার মেসেজটি পড়েছে কিন্তু এখনও উত্তর দিচ্ছে না ফলে তার মনের মধ্যে এক ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হয়।

আর এই কারণেই মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করার সময় অতিরিক্ত সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়।

মেসেঞ্জারে যা করবেন না এবং যা করবেন

  • শুধু হাই বা হ্যালো দিয়ে মেসেজ শুরু করবেন না। হাই বা হ্যালো দিতে চাইলে একই সাথে আপনার পরিচয়ও দিন। সাথে কেন মেসেজ দিয়েছেন সেটি ও জানিয়ে দিন তার উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে
  • “হ্যালো স্যার” বলে চুপ করে বসে থাকবেন না। উপরের নির্দেশনা অনুসরন করুন হুট করে কোনো প্রশ্ন দিয়ে যোগাযোগ শুরু করবেন না। যেমন “আপনি কেমন আছেন” বা “লাঞ্চ করেছেন কি না” এ ধরনের প্রশ্ন দিয়ে মেসেজ শুরু করবেন না। কিভাবে মেসেজ শুরু করবেন সেটি প্রথম বুলেট পয়েন্টে বলেছি
  • সবচেয়ে ভালো হয় এইভাবে মেসেজ শুরু করতে পারলে - “দুঃখিত আপনাকে সরাসরি মেসেজ করার জন্য। একটি বিশেষ দরকারে (কি বিষয়ক সেটি সংক্ষেপে বলে দিবেন) আপনার সাথে আলাপ করতে চাইছিলাম। আপনি যদি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন এখানে আলোচনা করতে পারি অথবা ইমেইলে ও আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। দয়া করে জানালে খুশি হব ☺
  • মেসেঞ্জারে অবশ্যই কোন এটাচমেন্ট পাঠাবেন না। নিতান্ত পাঠাতে চাইলে আগে জিজ্ঞেস করে নিবেন

শেষ কথা

প্রফেসররা সিরিয়াস কোন আলোচনা মেসেঞ্জারে করতে নাও চাইতে পারেন। এ কারণে মেসেঞ্জারে শুধু তাদের সাথেই আপনি যোগাযোগ করবেন যারা কোন না কোনভাবে আপনার সাথে কানেক্টেড। এজন্য ব্যক্তিগত পরিচয় থাকলে ভালো, না থাকলেও কোন সমস্যা নেই। যে প্রফেসর সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাক্টিভ, তাকে মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যেতেই পারে। কিন্তু উপরের সতর্কতাগুলো খেয়াল রাখতে হবে। যাই হোক আজকে এ পর্যন্তই থাক। এ বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন, মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে মন্তব্য আকারে দেয়ার অনুরোধ রইল।

থ্যাঙ্ক ইউ।

লাইক ও শেয়ার করুন

এই লেখাটি ভাল লাগলে কিংবা দরকারি মনে হলে লাইক ও শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

Photo by Onlineprinters / Unsplash

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *